তর্ক-বিতর্ক ও যুক্তি-খন্ডনের টিপস্

কিভাবে তর্ক-বিতর্কে জয়লাভ করা যায় প্রথমেই বলে নিচ্ছি ‘প্রচলিত প্রবাদের সূত্র ধরে’- ‘বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’। এই কথাটি দার্শনিক ও ইংরেজী প্রাবন্ধিক ফ্রান্সিস বেকন বলেছেন,“Read not to contradict or confute, but to weigh and consider’’ আমাদের পড়ালেখার উদ্দেশ্য ভিবেদ ও দ্বিধাগ্রস্থ্য করা নয়, এটি হতে হবে বিচার বিশ্লেষণ ও বিবেচনার জন্য। যাহোক স্নায়ুতত্তের যুগ হল বর্তমান ও আধুনিকোত্তর যুগ । যুক্তিকে বলা হয় তর্ক-বিতর্কের ভিত্তি । সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য বানাতে এরা একটি আর একটির পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। কোন তর্ক-বিতর্কে জয় লাভ করতে হলে তার অদলে জোরালো, বাস্তবসম্মত ও প্রাসঙ্গিক বা সঙ্গতিপূর্ণ যুক্তি/উদাহরণ/তথ্যবহুল প্রমাণ দ্বারা করাতে হয়। এসব যুক্তিসমূহ রেডিমেড খাট বা চকির পায়া। ঠেকনার মত তা দাড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে। এখানে উল্লেখ্য যে, যে খাট বা চকির পায়া বা ঠেকনা যত বেশি শক্ত বা মজবুত তার খাট বা চকিটি তত বেশি মজবুত ও টেকসই ভাবে দাড়িয়ে থাকতে পারে। আধুনিক বা ফরমাল নিয়মসমূহ নিম্মরূপ: ১. বক্তব্য বা যুক্তি উপস্থাপনার শুরু হতে শেষ পর্যন্ত ৪টি মূল বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাকতে হবে (i) স্বর্ত:স্ফূর্ততা শ্রুতিমধুরতা (ii) উদাহরণ ও আস্থাশীলতা এবং প্রাসঙ্গিকতা ও সঙ্গতি (iii) ব্যাকরণ ও বাক্যালংকার। ২. তর্ক-বিতর্ক বা যুক্তি উপস্থাপনার নির্ধারিত বরাদ্ধকৃত সময়ের উপর ভিত্তি করে যুক্তি খন্ডনের প্রতিটি সেকেন্ডে সময়, পূর্ব থেকেই বাজেট করে নিতে হবে । ৩. আলোচ্য উদ্দিপক বা যুক্তি উপাস্থাপনের বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সর্বাআলোচিত প্রসঙ্গের সঠিক তথ্য সূত্র সহ উদাহরনের অবতারনা করা। ৪. আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ, তাই তর্ক ও যুক্তির খন্ডন, যদি হয় বিজ্ঞান সম্মত তবে তা হয় আরও বেশি সমৃদ্ধ। ৫. ভিক্টরিয়ান যুগের কবি সমালোচক মেথিও আর্নোল্ড বলেছেন, “The best poetry is what we want” অর্থাৎ সর্বোচ্চ কাব্য হল সেটিই যা আমরা চাই; যা আমাদের ভাল লাগে ।” তাই আরও কথার সাথে মিল রেখে বলা যেতে পারে, তর্ক বিতর্কে যুক্তি ও তথ্য বহুল উদাহরণ হওয়া উচিৎ সেগুলুই বিচারক, দর্শক ও মাননীয় মডারেটর বক্তার কাছে যা কিছু আশা করছেন । ৬. যুুক্তি দাড় করানোর অন্য অর্থ হল কোন কিুছুর সত্যতা প্রমান করা । সুতরাং যে প্রধান কারনে বা দিকগুলুর জন্য বিষয়টি সঠিক, সত্য ও সঙ্গতিপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে তা সর্ব প্রথমে উপস্থাপনা করা ।একজন দক্ষ যুক্তিবীদ অনেক সময় ভ্রান্ত ও মতভেদ কিংবা জটিল জটিল বিষয়ও সত্য বলে বা মিথ্যায় পরিনত করে ফেলতে পারেন । যেমনটি পেরেছিল থেলেস ও নিকোলাস কোপার্নিকাস ‘সূর্য ও পৃথিবীর ঘূর্ণন ও আবর্তন নিয়ে । ৭.একজন দক্ষ যুক্তি-বীদ হল একজন পাকা গাড়ি চালকের মত যিনি সকল উচুনিচু, আঁকা–বাঁকা, সমান ঢালু রাস্তার মধ্যেও করে টাইমিং করে ড্রাইভিং করতে পারেন এবং সময় উত্তীর্ণের পূর্বেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারেন । ৮. আধুনিক বুদ্ধিবাদের জনক রেনে ডেকার্টের বিচার-বিশ্লেষণ ও নিরীক্ষণের চারটি সূত্র আংশিক ব্যবহার করা যেতে পারে উক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ।যেমন (i) যুক্তি বা বক্তব্যের বিষয়টিকে অনেকগুলো অংশে/ হিন্টসে ভাগ করে নেয়া ।(ii) সত্য বলে প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত জোড়ালো ও গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি উদাহরণের অবতারনা করতে থাকা । (iii) সহজ সরল বিষয় থেকে ধিরে ধিরে জটিল ও মনস্তাত্মিক ও আধ্যাত্মিক বিষয়ের দিকে ধাবিত হওয়া । এবং (iv) সর্ব শেষে, এমন ভাবে যুক্তি খন্ডন ও বিতর্ক উপস্থাপন করতে হবে যেন কোন দিকথেকে কোন বিষয় বা গুরুত্বপূর্ণ কথা/ যুক্তি বাদ না পরে যায় । ৯. ধরা যাক, বিতর্কের বিষয় হল ‘বাংলার বিপুল জনসংখ্যা ও বিস্ফোরিত জনস্রোতই হল যানজটের প্রধান অন্তরায় । এই টপিকের পক্ষে বা বিপক্ষে যুক্তি খন্ডন করে উক্ত কথার সত্যতা প্রমান করতে হবে । পক্ষে: প্রথম আলো পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিবৃত্তিতে কোরআন ও হাদীসের সাথে মিল রেখে বিশ্বের শীর্ষ এবং একমাত্র আলোড়ন সৃষ্টিকারী বিগ ব্যাং এর উদ্ভাবক ও ব্যাখ্যা প্রদান কারী মার্কিন বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছেন, “ পৃথীবিতে একমাত্র মানবই মানবের জন্য হুমমি স্বরুপ ।” তার কথার সূত্র ধরে কি আমরা একমতে মিলিত হতে পারি না যে, বাংলার বিপুল জনসংখ্যা ও বিষ্ফোরিত জনস্রোতই হল যানজটের প্রদান অন্তরায় । মাননীয় মাডারেটর ও সম্মানিত সকল সূধী মন্ডলি .. জ্ঞানের বহু শাখা প্রশাখার জনক এরিস্টটোল বলেছেন, “Literature is a thing both rooted from human.” সাহিত্যের সবকিছুই সৃষ্টি হয় মানবের নিকট হতে ।” তাই এটাই বলার অপেক্ষা রাখে কি গাড়ার মালিক যিনি হতে পারেন ভাঙ্গার দায়টা তার নিজেরই হয়, প্রিয় প্রতিপক্ষ বন্ধুরা । বর্ষার চারিদিকে যখন কানায় কানায় উপচে পরা পানি থৈ থৈ করে তখন তার স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যহত হয় এবং এর স্রোতও গতিশীল প্রবাহে থাম ধরে । তেমনি প্রবল জনস্রোত চলাচলের রাস্তাকে মন্থ্যর করে দেয়া এবং ফলে দেখা যায় যানজটের চরম ভোগান্তি ।মাননীয় মডারেটর, তাই কোন কথা বলার অবকাশ থাকে না যে এই বিপুল জনগনই বাংলার ভয়াবহ যানজটের প্রধান অন্তরায় । আমি আশা করি আমার প্রাতপক্ষের বন্ধুরাও এর আলোচ্য কথার সাথে বিচক্ষণ ভাবে একমত পোষণ করবেন । অনেক অনেক ধন্যবাদ সকলকে । বিপক্ষে: মাননীয় মডারেটর ও আমার প্রতিপক্ষের বন্ধুদের বলতে চাচ্ছি একজন আনারি ও অপরিকল্পিত ইন্টারনেট ব্যবহাকারী মিডিয়ার সঠিক ব্যবহারে ব্যর্থ্য হয়ে যদি হতাশায় ভোগে তবে তার জন্য পূরো অনলাইন ও ইন্টারনেট প্রযুক্তিকেই কি আমরা প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করে ফেলতে পারি ।মাননীয় মডারেটর, এটি একটি ভেবে দেখার বিষয় হলেও হতে পারে না কি ……..। প্রতিপক্ষের বন্ধুরা আমি মনে করি মিডিয়ার সঠিক ব্যবহারই পারে এই আনারি মিডিয়া লোকটিকে হতাশা থেকে মুক্ত করতে । মাননীয় মডারেটর ………………….এক কথার সাথে মিল রেখে বলছি যে, বাংলাদেশের সমগ্র ভূখন্ডের তোলনায় জনসংখার অত্যাধিক হলেও অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থাই হল যানজটের প্রধান অন্তরায় । হিন্স আকারে যুক্তির ব্য্যাখ্যা Criticism বা সমালোচনার জনক স্যার ফিলিপ সিডনি বলেছেন,“ The world is brazen, only the human delivers it the golden.” যার অর্থ হল, প্রথিবী নিতান্তই হল পতিত বা অনুর্ভর, একমাত্র মানুষই তাকে করেছেন সুবর্ণ ও সুন্দর । তাই সৃষ্টির সেরা জীব কোন কিছুই অন্তরায় হতে পারে না । সেই কথার সূত্র ধরেই আজকের বিতর্কের বিষয় ‘বাংলার বিপুল জনসংখ্যা ও বিষ্ফোরিত জনস্রোতই হল যানজটের প্রধান অন্তরায়’ এর বিপক্ষে সম্পূর্ণভাবে মত পোষণ করছি । আর সেই সাথে বলছি, “ বাংলাদেশের সমগ্র ভূখন্ডের তোলনায় জনসংখার অত্যাধিক হলেও অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থাই হল যানজটের প্রধান অন্তরায় ।”আশা করছি আমার প্রতিপক্ষের বন্ধুরাও এই কথার সাথে সন্দেহাতীতভাবে একমত পোষণ করবেন । আবারও সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ । ১০.উপরে আংশিক ভাবে উদাহরণের জন্য একটি তুলনামূলক বিতর্ক পক্ষে ও বিপক্ষ আকারে তুলে ধরা হল । আলোচনার সমাপ্তিতে বলা বাহুল্য যে, বিতর্ক বিষয়টি সত্যিকার অর্থে একটি বিতর্কিত বিষয় । এর কারণ হল সত্যের কাছে যু্িক্ত বিজয়ী হলেও মানবতার কাছে যুক্তি অনেক আগে থেকেই পরাজিত । তেমনি যুক্তি প্রদান করে বিতর্কে জয় লাভ হয় ঠিকই কিন্তু বিবেকের অডিটরিয়ামে পরাজিত হয়ে আছে অনেক আগে থেকেই । যুক্তির অপর নাম ‘মিথ্যা’ কথাটি যদি মিথ্যা মনে না হয় তবে তর্ক বিতর্কের প্রতিযোগিতায় যুক্তি/ প্রমাণ/ উদাহারণ নিত্যান্তই হতে পারে একমাত্র জয় কিংবা পরাজয় যা আপেক্ষিক ।নন্দনের পরতে পরতে সত্য-সুন্দর এক অদৃশ্য প্রতিমূর্তির বসবাস, যা যুক্তিহীন বাস্তবতা, অদৃশ্য -প্রত্যক্ষ, অস্পৃশ্য কিন্তু অনুভব ও অনুভুতির কেন্দ্রবিন্দু । কোন ভুল-ত্রুটি হলে অনুগ্রহপূর্বক আমাদের জানাবেন । সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ