হাজার বছর ধরে উপন্যাসের সারাংশ…

১. রচনা/ লেখাটির নাম:………………….হাজার বছর ধরে । ২. লেখক/ রাইটারের নাম: ………………………জহির রায়হান । ৩. পটভূমি/ পেক্ষাপট রচনাটির প্লট কি নিয়ে: …..ছবির প্রেক্ষাপট গড়ে উঠেছে গ্রামীণ জীবনকে কেন্দ্র করে । যেই গ্রাম যুগের পর যুগ বেঁচে আছে । দিঘির পাড়কে কেন্দ্র করে কয়েক বাড়ি গড়ে উঠেছে আজ বহু বছর ধরে । এটি জহির রায়হানের কালজয়ী একটি উপন্যাস। এখানে লেখক গ্রাম বাংলার হাজার বছর ধরে চলে আসা ইতিহাস, ঐতিহ্য তুলে ধরেছেন। গ্রাম বাংলার মানুষের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, আচার-অনুষ্ঠান, ভালোবাসা-নির্মমতা সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ৪. লেখা/ রচনার প্রধান চরিত্র সমূহ: সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ……… বুড়ো মকবুল – শিকদার বাড়ির প্রধান ও মুরব্বি আমেনা – বুড়ো মকবুলের প্রথমা স্ত্রী ফাতেমা – বুড়ো মকবুলের দ্বিতীয়া স্ত্রী টুনি – বুড়ো মকবুলের তৃতীয়া স্ত্রী ও গল্পের নায়িকা মন্তু – গল্পের নায়ক আম্বিয়া – (গল্পের শেষ পর্যায়ে মন্তুর স্ত্রী) ফকিরের মা – প্রতিবেশি আবুল – প্রতিবেশি হালিমা – আবুলের স্ত্রী গনু মোল্লা – ধর্মীয় ব্যাক্তি (প্রতিবেশি) ৫. রচনার/ লেখার সারাংশ: নদী বয়ে চলেছে আপন গতিতে। গাছে গাছে ফুল ফোটে। আকাশে পাখি উড়ে- আপন মনে গান গায়। হাজার বছর ধরে যেই জীবনধারা বয়ে চলেছে, তাতে আশা-নিরাশা, প্রেম-ভালবাসা, চাওয়া-পাওয়ার খেলা চললেও তা সহজে চোখে পড়ে না, অন্ধকারে ঢাকা থাকে। কঠিন অচলায়তন সমাজে আর যাই থাকুক, নারীর কোন অধিকার নাই। নারী হাতের পুতুল মাত্র। পুরুষ তাকে যেমন নাচায় তেমন নাচে। নিজের ইচ্ছেতে কাউকে বিয়ে করাটা এমন সমাজে অপরাধ, গুরুতর অপরাধ। অন্ধকার এই সমাজে আনাচে কানাচে বাস করে কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, নারী নির্যাতন। পরীর দীঘির পাড়ের একটি গ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কাহিনী। কখন এই গ্রামের গোড়াপত্তন হয়েছিল কেউ বলতে পারে না। এক বন্যায় “কাষেম শিকদার” আর তার বউ বানের পানিতে ভেলায় ভাসতে ভাসতে এসে ঠাই নিয়েছিল এই জায়গায়। সেই থেকে এখানে পত্তন হয়েছিল শিকদার বাড়ির। শিকদার বাড়ীতে বাস করে বৃদ্ধ “মকবুল” ও তার তিন স্ত্রী সহ “আবুল” “রশিদ”, “ফকিরের মা” ও “মন্তু” এবং আরো অনেকে। বৃদ্ধ মকবুলের অষ্টাদশি বউ টুনির মনটা মকবুলের শাসন মানতে চায় না। সে চায় খোলা আকাশের নিচে বেড়াতে, হাসতে, খেলতে। তাই সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় অল্প বয়সী সঠামদেহী মন্তকে। মন্ত বাবা-মা হারা অনাত। বিভিন্ন কাজ করে বেড়ায়। টুনি আর মন্তু সকলের অগোচরে রাতের বেলায় বেরিয়ে পড়ে মাছ ধরতে। বর্ষায় যায় শাপলা তুলতে। এমনি করে দুজন দুজনার কাছে এসে যায়। অব্যক্ত ভালবাসার জোয়ারে ভাসে ওরা দু’জন। কিন্ত কেউ মুখ ফুঁটে বলতে পারেনা মনের কথা, লোক লজ্জার ভয়ে। সমাজের রক্ত চক্ষু ওদের দুরে রাখে। গাঁও গেরামে যা হয়, কলেরা বসন্তের মড়ক লাগলে উজাড় হয়ে যায় কয়েক ঘর মানুষ। ডাক্তার না দেখিয়ে টুকটাক তাবিজ করে, এভাবেই দিন চলে। মকবুলের আকস্মিক মৃত্যর পর মন্ত যখন মনের কথা টুনিকে খুলে বলে তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। গুন মোল্লা, আবলি, রশদ, ফকিরের মা, সালেহা কেই নেই। টুনির সঙ্গে মন্তর অনেক দিন দেখা হয়নি। টুনি হারিয়ে গেছে ওর জীবন থেকে। তবুও টুনিকে মাঝে মাঝে মনে পড়ে মন্তর। এমনি করে অনেকটা সময় পার হয়েছে। রাতের বেলা সুরত আলীর ছেলে ওর বাপের মতোই পুঁথি করে- “শোন শোন বন্ধুগনে শোন দিয়া মন, ভেলুয়ার কথা কিছু শান সর্বজন।” ভেলুয়া সুন্দরীর কথা সবাই শানে। একই তালে, একই সুরে হাজার বছরের অন্ধকার এক ইতিহাস নিয়ে এগিয়ে চলে সবাই। হাজার বছরের পুরনো জোত্স্না ভরা রাতে একই পুঁথির সুর ভেসে বেড়ায় বাতাসে। —কালের আবর্তে সময় গড়ায়। প্রকৃতিতেও পরিবর্তন আসে। শুধু পরিবর্তন আসেনা অন্ধকার, কুসংস্কারাছন্ন গ্রাম বাংলার আচলায়াতন সমাজে। ৬. রচনা লেখার সাল: ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান এই সামাজিক উপন্যাসটি ১৯৬৪ সালে লেখেন । ৭. প্রকাশের সাল: …………….. (১৯৯৮) । ৮. যে পত্রিকায়/ মাধ্যমে প্রকাশ হয় এর নাম: ………………অনুপম প্রকাশনী । ৯. লেখাটির প্রধান চরিত্র: ………..টুনি । ১০. প্রধান প্রধান সিমবল/ বাক্যালংকার/ শব্দচয়ন: …….গ্রাম বাংলার অজ্ঞ লোকদের আঞ্চলিক ভাষা । ১১. পাঠকের নিকট গ্রহণযোগ্যতা: ……………….ব্যাপক ভাবে সমাদ্রিত ও সকলের নিকট অসাধারন শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার এই উপন্যাসটি এবং এরই সূত্র ধরে এই উপন্যাসটি বাংলাদেশের এসএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার কর্তৃক পাঠ্য করা হয়েছে । ১২. রচনার উল্লখেযোগ্য বিষয়/ বৈশিষ্টসমূহ: ……মকবুলের অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং টুনির একাকিত্ত জীবনের অসীম কালের যাত্রা । ১৩. লিটারেরি জেনরি/ রচনাটির ধরন: ………………….সামাজিক উপন্যাস । ১৪. অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য: ……এছাড়াও প্রায় প্রতিটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসটিতে । ১৫.লেখাটিতে লেখকের দর্শন/ উদ্দেশ্য:…..তৎকালীন আবহমান গ্রাম বাংলার সহজ সরল জনসাধারনের জীবন প্রবাহের চিত্র নিঁখুত ভাবে তোলে ধরা এবং তাদের এই অসহায় জীবনের করুন দশা হতে নিজেদের কুসংস্কার ও দারিদ্রের গন্ডি হতে মুক্তি লাভ করা ছিল লেখকের অগ্র দর্শন ও প্রত্যাশা । সূত্র: বাংলা উইকিপিডিয়া এবং হেমাস মিডিয়া ।