বিচার শক্তি…

সেই ব্যক্তি যে থমাস এডিসনের অংশীদার হওয়ার ‘কথা’ ভেবেছিল… ‘বিচার বস্তু’ আছে তা অস্বীকার করা যয়না এবং তা খুবই শক্তিশালী বস্তু, বিশেষ করে যখন তার দ্বারা উদ্দেশ্যের স্পষ্টতা, একাগ্রতা এবং তার থেকে ধন-সম্পত্তি ও ভৌতিক জিনিসের প্রাপ্তির অদম্য ইচ্ছা প্রকাশিত হয়। প্রায় তিরিশ বছর আগে এডউইন সি. বার্ন্স এই সত্য খুঁজে বের করেছিলেন যে মানুষ সত্যিই বিচার শক্তির দ্বারা ধনী হতে পারে। তিনি একবারেই এই সত্যি উপলব্ধি করতে পারেন নি, মহান এডিসনের ব্যবসার পর্টনার হওয়ার জন্য অদম্য ইচ্ছা জাগ্রত হলে ধীরে-ধীরে এই সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। বার্সের এই অদম্য ইচ্ছার একটা বিশেষত্ব ছিল, তাহলো তিনি খুবই স্পষ্ট ছিলেন। তিনি তার জন্য এডিসনের সাথে কাজ করতে চান নি। তার এই ইচ্ছা কিভাবে বাস্তবায়িত হয়ে উঠেছিল তা ধ্যান পূর্বক লক্ষ্য করতে হবে। তবেই আপনি যে তেরো রকম সিদ্ধান্তের দ্বারা সে ধনী হয়ে ওঠেছিল তা বুঝতে পারবেন। যখন তার মনে ইচ্ছা জেগেছিল তখন তা ফলপ্রসু করার মত অবস্থা তার ছিল না। তার সামনে ছিল দুটো বিরাট সমস্যা, না তিনি এডিসনকে জানতেন, নিউজার্সী থেকে আরেঞ্জ যাওয়ার ট্রেন ভাড়াও তার কাছে ছিল না। এই রকম সমস্যা থাকলে বেশীর ভাগ রোকই হতাশ হয়ে পড়ত, তাতে কোন সন্দেহই নেই। কিন্তু শ্রী এডীসনের গবেষণাগারে গিয়ে পৌঁছান এবং নিজের বক্তব্য জানান, এই মহান আবিষ্কারক ওখানে এসেছেন তার সাথে ব্যবসা করার জন্য। বহু বাদে তাদের এই প্রথম সাক্ষাৎকারের বলতে গিয়ে এডিসন বলেছিলেন, ‘আমার সামনে একটা অতি সাধারণ বিধস্ত লোক দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু তার চোখে-মুখে এক অদম্য সংকল্পের ছায়া ছিল, দৃঢ়তার সাথে সে তার বক্তব্য সম্পূর্ণ করেছিল। মানুষ সম্পর্কে বহু বছর ধরে আমার যে অভিজ্ঞতা তার জোরে বুঝতে পেরেছিলাম যে কোন মানুষ যখন ইচ্ছা পূরনের জন্য ভবিষ্যৎ- এর পরওয় করে না, সে অবস্যই সফল হয়। তার সংকল্প দেখেই আমি তাকে সুযোগ দিই। পরবর্তী ঘটনা থেকে এটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল যে আমি কোন ভুল করিনি। সেই সময় বনস্পতি স্বরূপ এডিসন এই যুবক বানর্ডকে কি বলেছিল, তার কোন মূল্য নেই, তার মনে কি ছিল সেটাই আসল কথা। এটা ছিল এডীসনের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী। এই সুযোগ প্রদানের পিছনে রাষ্ট্রের রূপ বা বেশ-ভূষা ততটা গুরূত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি, যতটা গুরূত্ব পূর্ণ ছিল তার মনের বিচার-বিবেচনা। প্রথম ইন্টারভিউয়ের পরেই যে বার্স এডীসনের অংশীদার হয়ে ওঠেছিল তা নয়। সে শুধু মাত্র এডীসনের বেতন ভোগী কর্মচারী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল । এডীসনের মতে সেই কাজও বেশী গুরূত্বপূর্ণ ছিল না-কিন্তু বার্ন্সের কাছে তা খুবই গুরূত্ব পূর্ণ ছিল কারণ এই কাজের মাধ্যমে বার্ন্স নিজের যোগ্যতা দেখানোর ও অংশীদার হয়ে পেয়েছিল। বেশ কয়েক মাস কেটে গিয়েছিল। এমন বিশেষ কিছু ঘটেনি যার দ্বারা বান্সের মনে হতে পারত যে, সে তার লক্ষ্য খুবই কাছাকাছি। কিন্তু তার মনে কোন একটা খোঁচা ছিল-এডীসনের অংশীদার হওয়ার ইচ্ছা তার মনে আরও তীব্রতর হয়ে ওঠেছিল। মনবৈজ্ঞানিকদের মতে ‘যখন কোন মানুষ কোন জিনিষ পাওয়ার জন্য সম্পূর্ণরূপে তৈরি থাকে, তখনই তা তার সামনে মূর্ত রূপে প্রকট হয়ে যায়।’ বার্ন্স শুধুমাত্র যে অংশীদার হওয়ার জন্যই প্রস্তুত ছিল তা নয়, তার সংকল্প এটাই ছিল যে, সে ততক্ষণ প্রস্তুত থাকতে পারবে যতক্ষণ না সে তার বাঞ্ছিত লক্ষ্য পূরণ করতে পারছে। যে কখনই নিজেকে বলেনি, “আরে ছাড়! আমার মনে হচ্ছে এই সব ছেড়ে আমাকে সেল্সম্যানের চাকরিই করতে হবে।” বরং যে নিজেকে বলত, “আমি এডীসনের অংশীদার হতে এসেছি, অবশ্যই তা হব, তাতে যদি সারা জীবন অপেক্ষা করতে হয় তাই করব।” সত্যিই এটাই ছিল তার মনের ইচ্ছা। মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য যদি সম্পূর্ণ স্পষ্ট হয়, তবে তার জীবনটা গাথাই বদলে যায়। যদি সেই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য নিজের মধ্যে একটা পাগলামি জন্ম নেয় তবে তা পূরণ হবেই। হয়তো তার মনের অবস্থা সম্পর্কে বান্স তখন সম্পূর্ণ রূপে ওয়াকিবহাল ছিল না ঠিকই কিন্তু তার একাগ্রতা, উদ্দেশ্যের স্পষ্টতা এবং দুর্দমনীয় ইচ্ছা সেই সমমÍ বিরোধ পরিষ্কার করে দিতে সফল হয়েছিল যা কখনও তাকে আক্রান্ত করত। কিন্তু যে রূপে সুযোগ এসেছিল তা বার্ন্স কখনও আশাও করতে পারেনি, সে কখনও সেভাবে ভাবেনি। কথায় বলে সুযোগ সর্বদা লুকিয়ে এবং দুর্ভাগ্যের নিশান উড়িয়ে আসে-দেখে মনে হবে তা পরাজয়ের প্রতীক, কিন্তু হয় সম্পূর্ণ বিপরীত। হয়তো এ কারণেই লোকে তাকে চিনে উঠতে পারেনা। সেই সময় দপ্তরের কাজের জন্য একটা নতুন মেশিন আবিষ্কারের কাজ সম্পূর্ণ করেছিলেন, যা এই সময় “এডীসন ডিক্টেরিং মেশিন” (এখন এডীফোন রূপে পরিচিত) নামে পরিচিত ছিল। এডীসনের সেলস্ ম্যান এই মেশিনের ব্যাপারে খুব বেশী উৎসাহ প্রকাশ করেনি। সে ভেবেছিল এই মেশিন বিক্রি করতে পায়ের ঘাম মাথায় ফেলতে হবে। বার্ন্স-এর মধ্যেই নিজের সুযোগ খুঁজে পেয়েছিল, যা এই মেশিনের রূপে বার্ন্সের হাতে সে ধরা দিয়েছিল, এই মেশিনের ব্যাপারে আবিষ্কারক এডীসন ও বার্ন্স ছাড়া কেউই তেমন আশ্বস্ত ছিলনা। বান্সের মনে হয়েছিল সে এডীসনের এই ডিক্টেরিং মেশিন বিক্রি করতে পারবে। সে এডীসনকে তা জানায় এবং সুযোগ পায়। সে যে শুধু মেশিন বিক্রি করেছিল তাই নয়, এতটাই সফলতা অর্জন করেছিল যে এডীসন বার্ন্সকে সারা দেশে তা বিতরণ ও বিপনন করতে বলেন। সেই থেকেই এই ব্যাবসায়িক বন্ধন দৃঢ় হতে শুরু করেছিল, “এডীসন দ্বারা সৃষ্ট ও বার্ন্স দ্বারা বিক্রিত মেশিন।” এখান থেকেই এই দুই ব্যবসায়ীর সন্ধির সূত্র পাত, যা তিরিশ বছরেরও বেশী টিকেছিল। এর মাধ্যমে বার্ন্স যে শুধু প্রচুর অর্থ রোজগার করেছিল তাই নয় বরং এর দ্বারা একটা অতিব গুরুত্বপূর্ণ কথা প্রমাণ হয়ে যায়, “চিন্তা করলেই ধনী হওয়া যায়।” বার্ন্সের এই ইচ্ছা তাকে কত অর্থ প্রদান করেছিল, তার পরিমাণ জানা একটু সমস্যা জনক কিন্তু কুড়ি-তিরিশ লক্ষ ডলারের কম নয়। কিন্তু এর থেকেও বড় যে জিনিসটা অতি স্পষ্ট রূপে প্রতীমান হয়ে ওঠে তা হল, যদি সঠিক সিদ্ধান্তের প্রয়োগ করা যায় তবে স্পষ্ট কামনা, অদম্য ইচ্ছা হয়ে মূর্ত রূপে প্রকট হতে পারে। বার্ন্স শুধুমাত্র মহান এডীসনের সাথে কাজ করার ইচ্ছা প্রকট করেছিল আর কোটিপতি হয়ে ওঠেছিল। তার কাছে প্রথম দিকে সম্পূর্ণ করেই এমন একটা ইচ্ছা আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছাড়া আর কি বা ছিল? প্রথম দিকে তার কাছে প্রচুর অর্থ, অনেক শিক্ষাগত যোগ্যতা বা কোন প্রভাব কিছুই ছিল না। কিন্তু তার মধ্যে ছিল এগিয়ে যাওয়ার একাগ্রতা, নিজের প্রতি বিশ্বাস ছিল এবং জয়ী হয়ে ওঠার জন্য প্রবল ইচ্ছা। এই তিনটি মহান অস্ত্রের সাহায্যে সে পৃথিবীর সবচেয়ে মহান আবিষ্কারকের সাথে যুক্ত হতে পেরেছিল।