ভালো পড়াশোনার জন্য জরুরী হচ্ছে ভালো ঘুম…

ভালো পড়াশোনার জন্য জরুরী হচ্ছে ভালো ঘুম আমার কি রাতে জেগে পড়াশোনা করা উচিত, নাকি সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়াশোনা করার অভ্যাস করা উচিত? একজন বিদ্যার্থীর জন্য কত ঘন্টা ঘুমোন যথেষ্ঠ হয়? পরীক্ষায় দিন গুলোয় ঘুমের সময় কম করলে কি সত্যিই লাভ হয়? দুপুর বেলা কি এটু ঘুমিয়ে নেয়া উচিত? আমাদের এইসব প্রশ্নের সঠিক ইত্তর জানা উচিত, যাতে প্রভাবশালী ভাবে আমরা নিজেদের পড়াশোনা করতে পারি। ঘুমের গুরুত্বকে জানার জন্য নিম্নলিখিত জিনিসগুলোকে বোঝা অত্যন্ত জরুরী: ঘুম জরুরী প্রোটিন উৎপাদন করে: ঘুমোবার সময়ে মস্তিষ্কের সমস্ত ভাগগুলো বিশ্রাম করে না। মস্তিষ্কের কিছু নির্দিষ্ট ভাগে ইলেকট্রিক্যাল কার্য্যকলাপ, অক্সিজেন ব্যবহার এবং এনার্জী ব্যায় হতে থাকে। এই সব কার্যকলাপের সময় মস্তিষ্কের কোশিকাগুলো প্রোটিন উৎপাদন করে। এই প্রোটিন স্মৃতিকে ওমা করতে সহায়তা করে। সুতরাং এটা অত্যান্ত জরুরি যে, আপনি পূর্ণ মাত্রায় ঘুমোন, যাতে প্রোটিন উৎপান হতে পারে। কারণ, প্রোটিন উৎপাদন হওয়া আর নষ্ট হওয়াটা হচ্ছে এক দৈনন্দিন প্রক্রিয়া যদি পুরোন প্রোটিন স্থানে নতুন প্রোটিন না আসে, তাহলে সমস্ত স্মৃতি ধীরে-ধীরে শেষ হয়ে পড়বে। এজন্য, প্রোটিন প্রক্রিয়া দ্বারা স্মৃতিধারণ করার জন্য ঘুমের জন্য এক আলাদা গুরুত্ব আছে। ঘুম তথ্যকে সু-ব্যবস্থিত করে: দিনের সময়ে আমরা যেসব তথ্য প্রাপ্ত করি, ঘুম সেগুলোকে সু-ব্যবস্থিত করে। আমরা যা কিছু দেখি, শুনি, স্বাদ গ্রহণ করি বা স্পর্শ করি… সেই সবের দ্বারা বিভিন্ন ধরনের তথ্য আমাদের মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌছায়। ঘুম এই সব তথ্যকে নাড়ি ষ্টোরেজে সু-ব্যবস্থিত করে। তাই, ভালো ঘুমের সাথে কখনও সমঝোতা করা উচিত নয়। আমাদের ভালোমতন ঘুমোন সর্বদা উচিত। কতক্ষন ঘুমোনকে ভালো ঘুম বলা হবে, সেটা বিভিন্ন ব্যাক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হতে পারে । এটা দেখতে হবে যে, সেই ব্যক্তি কতটা শারীরিক আর মানসিক কাজ করেন এবং উনি কি ধরনের খাবার খান? বিদ্যার্থীদের জন্য ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম অত্যন্ত জরুরী। এটাও মাথায় রাখা উচিত যে, পুরো ঘুম না হলে মানুষের তথ্য দীর্ঘকালীন সম্বন্ধের জন্য স্মৃতিতে পাঠানোর ক্ষমতা কমে যায়। দুপুরের ঘুম: দুপুরের ঘুমের অর্থ হল সকালের কাজ শেষ করার পরে যখন মস্তিষ্কে শিথিল অবস্থায় থাকে, তখন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের ঘুম মস্তিষ্ককে এনার্জী ভরে দেয়। যদিও, এই ঘুম শারীরিক রূপে ব্যক্তিকে শিথিল করে দেয়, কিন্তু মস্তিষ্ককে এনার্জীতে ভরে দেয়।আপনার চাকরী যদি এমনটা হয়, যাতে আপনি রাতে ভালোমতন ঘুমোতে পারেন না, তাহলে চিন্তিত হবার কোন প্রয়োজন নেই… আপনি কিছুক্ষন শান্ত ভাবে বা ধ্যানের মুদ্রায় বসতে পারেন। এতেও আপনার স্মৃতি তরোতাজা হয়ে উঠবে। অনিদ্রার ওপরে নিয়ন্ত্রণ: যদি আপনাররাতে ঘুম না আসতে চায়, তার জন্য আমাদের পরামর্শ হল: ১. রাতে খাবার পরে বা গভীর রাতে চা বা কাফ খাওয়াটা বিকট সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আপনি যদি দিনের মধ্যে যথেষ্ট মাত্রায় ক্যাফিন উপভোগ করে থাকেন, তাহলে সেটা আপনার ঘুমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ২. বেশী প্রোটিনযুক্ত খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখুন – আপনার যদি রাতে ঘুম আসতে না চায়, তাহলে ঘুমোবার ঠিক আগেড় বেশী প্রোটিনযুক্ত খাবার খাবেন না। ৩. ঘুমোবার সময়ের পালন- যদি আপনার ঘুমোবার সময়টা পরিবর্তিত হতে থাকে, তাহলে সেটাও অনিদ্রার কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই, ঘুমোবার সময়কে নির্দিষ্ট করে নিন। অনিদ্রার ওপরে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন– লম্বা নিয়মকে মনে করার সাংকেতিক বিধি ! লম্বা নিয়মকে মনে করাটা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এক সাধারন সমস্যা। ওনারা প্রায়ই এমন অভিযোগ করেন যে, একবার পড়ার পরে তার এক অনুপাতও মনে করতে পারেনা। সাধারণতঃ আমাদের মস্তিষ্ক সব জায়গায় তো চলে যায়, কিন্তু নিয়মের ওপরে খাকে না… আর এই কারনেই লম্বা ব্যাখ্যা মনে রাখা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। কি করে একাগ্র হবেন? সমাধান: গুরুত্ব সাংকেত বিধি: ১. অধ্যায়ের শীর্ষককে পড়া এবং কয়েকটা মূহুর্ত ওতে লাগান দেয়া। শীর্ষ থেকে যে অর্থ আপনি পাচ্ছেন, সেটাকে প্রাপ্ত করার চেষ্টা করুন। উদাহরন হিসেবে, অধ্যায়ের শীর্ষক হল থার্মোডায়নামিক্স (Thermodynamics) ! হতেপারে যে, আপনি হয়তো এই শব্দটার অর্থ বুঝতে পারছেন না… তবুও কিছু একটা অর্থ বের করতে চেষ্টা করুনশীষকের ওপরে ভালো ভাবে মনোযোগ দিন। Thermo-র অর্থ হচ্ছে heat এবার এই অধ্যায়ের একটা অর্থ আমি বের করতে পারছি যে, এই অধ্যায় dynamics of heat-য়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। অধ্যায়ের প্রতি একাগ্র হলে বা অনুমান লাগলে আপনি নিজের অবচেতন মনে অধ্যায়কে গ্রহন করার জন্য একটা ভিত্তি তৈরি করতে পারবেন। এটা জরুরি নয় যে, সর্বদা আপনার অনুমান সঠিক হবে। তবুও এই অভ্যাস আপনাকে এই অধ্যায়ের সম্বন্ধে একটা ভূ’মিকা তৈরী করতে সাহায্য করবে… যাতে আপনি মানসিক রূপে প্রস্তুত হতে পারেন ২. এবার আপনি থিওরীর প্রতিটা প্যারাগ্রাফ এই ভাবে পড়া…যাতে আপনি এগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত পেতে পারেন। যে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত পাবেন, সেটা গোটা প্যারাগ্রাফের প্রতিনিধিত্ব করবে। ৩. আপনি এই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, পরবর্তী প্যারাগ্রাফ পড়ার আগে তার আগের প্যারাগ্রাফের গুরুত্বপূর্ণ সংকেতকে আপনি ভালোমতন গ্রহন করে নেবেন। এই জিনিস টা আপনাকে পূর্ণ রূপে অধ্যায়নে একাগ্র হতে সহায়তা করবে। ৪. ধরে নিন যে, গোটা অধ্যায়ে ১৫-টি প্যারাগ্রাফ আছে… এর অর্থ হল এই যে, ১৫ বা তার বেশী গুরুত্বপূর্ণ সংকেত একত্রিত হয়ে গেছে। এবার এই সব সংকেত গুলোকে ভালো করে দেখুন আর ওগুলোর সাহায্যে পুরো অধ্যায়কে মনে করার চেষ্টা করুন। ৫. এর পরের বার যখন আপনি অধ্যায়ের পুণরধ্যায় করবেন, তখন এই সব গুরুত্বপূর্ণ সংকেতগুলো আপনাকে দ্রুত পুণরধ্যয়ন করতে সহায়তা করবে। সামর্থ্য অনুযায়ী পড়ার সময়: শুতে যাবার সময় এবং ঘুম থেকে ওঠার সময়, বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে পৃখক পৃথক ঘন্টার মধ্যে আলাদা-আলাদা স্তরের স্ফ’র্তি থাকে। যেসব ব্যক্তি রাতে দেরি করে ঘুমোন এবং সকালে দেরী করে বিছানা ছাড়েন, তাঁরা সেইসব ব্যক্তিদের তুলনায়, যারা রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যান এবং সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠেন, দিনের কোন একটা নির্দিষ্ট সময়ে মানসিক রূপে বেশী প্রখর থাকেন। এই সব জিনিস মুখ্য রূপে এই জিনিসটারে ওপরে নির্ভর করে যে, আপনার ঘুম কতটা ভালো হয়েছে, সারা দিন আপনি কি খান, আপনার কার্যকলাপ কোন স্তরের এবং দিনের পিক টাইমে আপনি কতটা সতর্ক এবং কতক্ষন আপনি নিজের সতর্ক ভাবকে বজায় রাখতে পারেন। প্রতিটা মানুষ সতর্ক থাকার নিজস্ব একটা স্টাইল থাকে। আপনি যদি নিজের সামর্থ্য পুরোপুরি প্রয়োগ করতে চান, তাহলে আপনাকে এটা জানতেই হবে যে, আপনার সর্বশ্রেষ্ঠ সতর্কতা সর্ব্বোচ্চ সীমা কোনটা এবং কোন সময়ে আপনার নিজের এনার্জীর সব থেকে ভালো প্রয়োগ করতে পারেন? সেই সময়টা চিনে নিন এবং এটা জানার চেষ্টা করুন যে, দিনের কোন সময়ে আপনার সামর্থ্য সব থেকে নূন্যতম স্তর এবং অধিকতর স্তরের ব্যাপারে জানতে পেরে যাবেন। এতে আপনার এই লাভ হবে যে, যখন আপনার সঞ্চিত এনার্জী অধিকতম থাকবে, সেই সময় আপিনি কোন সৃজনাত্মক কাজ, মানসিক কাজ এবং তার প্রভাব ও বেশী হবে। এই ভাবে আপনি নিজের কাজে পরিবর্তন এনে প্রাথমিকতা অনুযায়ী কাজ করার জন্য এক টাইম টেবিল বানাতে পারবেন। অধিকতম সতর্কতাকে মাথায় রেখে নিজের মানসিক শক্তিকে ভালো ভাবে প্রয়োগ করুন।