ভাল পরীক্ষার জন্য…

পরীক্ষার জন্য… পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অধ্যাপক/ শিক্ষকগণ নিজের অভিজ্ঞতার ওপরে ভিত্তি করে সম্ভাব্য প্রশ্নের প্রস্তুতি নেবার জন্য বলতে পারেন। পরীক্ষা শুরু হবার আগে আপনি কত দ্রুত প্রস্তুতি নিতে পারেন… পরীক্ষা শুরু হতে আর কত দিন বা কত সপ্তাহ বাকী আছে, এইসব চিন্তা ভাবনা করার ক্ষমতার ওপরে নির্ভর করে। আপনি যখন পরীক্ষার আগে পুণরধ্যয়নের কাজে ব্যস্ত থাকেন, তখন আপনার মাথার ভেতরে একটা জিনিস ঘুরতে থাকে যে, বাকী দিন গুলো কি ভাবে সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে ? সময় বড় দ্রুত কেটে যায়, তাই এটা খুবই জরুরী হয়ে ওঠে যে, পুণরধ্যায়ন দ্রুতগতিতে, যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি সেরে নেওয়া যাক। এর জন্য লিখিত পরামর্শগুলোর ওপরে মনোযোগ দিনঃ নিজেকে ব্যবস্থিত করে তুলুনঃ বিভিন্নসময়ের প্রোগ্রাম অনুযায়ী নিজের পুণরধ্যয়নকে ব্যবস্থিত করুন। পরীক্ষার আগের শেষ সপ্তাহগুলোর জন্য সাপ্তাহিক ষ্টাডি প্রোগ্রাম বানান … প্রতি দিনের জন্য দৈনিক প্রোগ্রাম এবং তার পরের কিছু ঘন্টার জন্য ষ্টাডি সেশন প্রোগ্রাম তৈরি করুন। এই ত্রিস্তরীয় প্রোগ্রামের ফলে আপনি নিজেই এটা লক্ষ করবেন যে,কি ভাবে দৈনিক উন্নতি আপনার সম্পূর্ণ ষ্টাডি প্রোগ্রামকে প্রভাবশালী করে তুলছে । প্রভাবশালী সময়ঃ অনেক ছাত্র-ছাত্রি এটা জানেন যে, ঠিক কখন ওনারা প্রভাবশালী ভাবে কাজ করতে পারেন। কিছু ব্যক্তি সকালের দিকে বেশী কাজ করতে পারেন, তো কিছু ব্যক্তি রাতের বেলা ভাল কাজ করতে পারেন। পরীক্ষার দিন গুলোয় আপনি প্রাপ্ত প্রতিটা সময়েই পড়ার ক্ষমতা রাখেন তাই এমন একটা প্রোগ্রাম তৈরি করুন যে, আপনি যখন খুবই বেশী মাত্রায় এনার্জীতে ভরপুর হয়ে থাকেন। তখন কোন বিষয়টা পড়া উচিত? কম এনার্জীযুক্ত সময়ে কোন্ বিষয়ের পুণরধ্যয়ন করা উচিত? এই ভাবে, নিজের ক্ষমতার মূল্যায়ন করে প্রোগ্রাম বানান। চিন্তা ত্যাগ করুনঃ ভালো সূত্রপাত সত্ত্বেও, অনেকবার আপনি এটা দেখেন যে, আপনার মস্তিষ্কের ভেতরে চিন্তার পোকা ঢুকে পড়েছে। যদি এমনটা হয়, তো কয়েক মুহুর্তের জন্য উঠে দাড়াঁন, একটু এদিক ওদিক পায়চারী করুন, গভীর নিঃশ্বাস ভেতরে নিন… আবার একবার পড়ার টেবিলের কাছে ফিরে আসুন। দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আবার একবার গভীর নিঃশ্বাস নিন কিন্তু এবার ধীরে ধীরে। পড়ার বিশ্রামঃ পড়াশোনা করার ফাঁকে-ফাঁকে কিছুক্ষনের জন্য বিশ্রাম অবশ্যই নিন।যখন আপনি বেশী মাত্রায় পড়াশোনা মনে করার চেষ্টা করেছেন, তখনই আপনার মাস্তিষ্কের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়ে পড়ে… যাতে আপনার ক্ষমতা বজায় থাকে। ষ্টাডি টেবিল থেকে কিছুক্ষনের জন্য ওঠে পড়ুন, একটু এদিক ওদিক পায়চারী করুন, নিজের মনোযোগ অন্য কোন জিনিষের ওপরে কেন্দ্রীভূত করে নিন… তারপর আবার ষ্টাডি টেবিলে ফিরে এসে পড়াশোনা শুরু করুন। একাগ্রচিত্তে পড়াশোনাঃ পুণরধ্যয়নের সময় বিশেষ-বিশেষ পয়েন্টগুলোর ওপরে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন। সময় সীমিত হবার ফলে আপনাকে এটা বেছে নিতে হবে যে, কি ভাবে যতটা সম্ভব বেশী পড়া যায়। বিস্তৃতভাবে পড়ার আর সেগুলো মনে রাখার মত সময় তখন আর থাকে না। শেষ সময়ে শুধুমাত্র বিশেষ-বিশেষ পয়েন্টগুলো মনে রাখার আশা করা যেতে পারে। উত্তেজক পদার্থ এড়িয়ে চলুন- চা, কফি ইত্যাদির মতো পানীয়কে এড়িয়ে চলা উচিত। যখন আপনার নার্ভাস সিষ্টেম আগে খেকেই অধিকতম ক্ষমতায় কাজ করছে, তখন ওদের আরও বেশী উত্তেজিত করে তোলার জন্য চা বা কফি খাবার কোন প্রয়োজন নেই । অতিরিক্ত মাত্রায় এগুলো আপনার শরীরের ওপরে প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে। বয়স আমাদের বয়স বাড়ার সাথে-সাথে আমাদের নিজেদের কুশলতার অভাবকে কি মেনে নেওয়া উচিত ?যুবারা নিজেদের মস্তিষ্কের কোশিকার বিকাশ স্বমন্ধে খুব একটা চিন্তিত থাকেন না আর ওনারা এই তথ্যটাকে অনুভব করেন যে, ওনাদের স্মৃতিশক্তি আজ যেমনটা আছে, বরাবর তেমনটা থাকবে না। মনে করতে পারাটা আংশিক রূপে শারীরিক এবং মানসিক প্রক্রিয়া আর এই ধরনের ডবল ব্যবস্থা সেই সব অসংখ্য বিবিধতার জন্য দায়ী থাকে, যার মধ্যে আমাদের স্মৃতি কাজ করে। মনোবৈজ্ঞানিক অর্থে স্মৃতি সেই পথের ওপরে ভিত্তি করে থাকে যেটা আমাদের মাস্তিষ্কের কোশিকাগুলোকে যুক্ত করে। এই সব রাস্তার সংখ্যা আর দায়িত্ব এর কার্য্যশীলতাকে নির্ধরিত করে। আমাদের বয়স যেমন-যেমন বেড়ে ওঠে, মস্তিষ্কের কোশিকাগুলোও তেমন-তেমন দুর্বল হয়ে পড়ে… আর তারপর একটা সময় এমনও আসে, যখন শেখার প্রক্রিয়ার তুলনায় ভোলার প্রক্রিয়া বেশী কাজ করতে থাকে। জীবনে এমন ধরনের পরিবর্তন অবশ্যই আসে, কিন্তু আমরা এমনটা ঘটতে দিতে বিলম্ব নিশ্চয়ই করাতে পারি। এটা কোন সংযোগ নয় যে, অনেক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিদের তুলনায় নিজের মস্তিষ্ককে বেশী কাজে লাগান। ওনারা খুব বেশী বয়স হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও নিজের স্মৃতিশক্তি আর উৎপাদন শক্তিকে বজায় রাখেন। জর্জ বানার্ড শ’, গোথে, টমাস এডিসন… এনাদের সম্বন্ধে একটু ভাবুন। এমনটা চিন্তা করা যুক্তিসঙ্গত হবে না যে, নিজের মস্তিষ্কের কোশিকাগুলোর সঠিক দেখাশোনা করার জন্য আমাদের ওদের দিয়ে কাজ করানো উচিত নয়। অর্থাৎ ওদের বিশ্রাম করতে দেয়া উচিত। বরং, যুক্তিসঙ্গত হচ্ছে এটা যে, আপনি নিজের মাস্তষ্ককে ঠিক সেই মত প্রশিক্ষন করে তুলতে পারেন, ঠিক যেমনটা আপনি সাধারনপরীক্ষাগুলোয় নিজের আত্মসন্তুষ্টির জন্য একে প্রশিক্ষণ করেন। আপনি যখন উল্লেখিত অভ্যাসগুলো করবেন, তখন আপনি এটা দেখতে পাবেন যে, সেই প্রয়োগ যা প্রথমবারের প্রচেষ্টা দ্বারা করা হয়, সেটা সহজ হয়ে ওঠে আর যখন সেই জিনিসটা পুণরাবৃত্তি করা হয়, তখন কিছু সময় পরে এটা অনুভব করা হয় যে, এই প্রচেষ্টা করার প্রয়োজনটা ছিল কি ? আদরা যদি এমনটা অনুভব করে নিই যে, মাংসপেশীর মতন স্মৃতিকেও উন্নত করে তোলা যায়, তাহলে আমাদের এই তথ্যটাকে মেনে নিতে হবে যে, মাংসপেশীর মতই এর কুশলতাও কম হয়ে আসতে পারে… যদি আমরা এটাকে ভালোভাবে কাজে না লাগাই । আমরা এটা জানি যে, কখনো-কখনো অসুস্থতার কারণে আমাদের কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত বিছানায় পড়ে থাকতে হয়। এমকি হাঁটা-চলা করাটাও তখন আমাদের পক্ষে মুশকিল হয়ে ওঠে। আমাদের পায়ের মাংসপেশী হাঁটতে ভুলে যায় আমাদের নতুন করে হাঁটা শিখতে হয়… ঠিক যেমনটা একটা ছোট্ট বাচ্চা প্রথমবার হাঁটতে শেখে। এতে অবাক হয়ে ওঠার মতো কিছুই নেই। আমাদের স্মৃতির সঙ্গেও এমনটাই ঘটে। ও নিজের বিশ্বসনীয়তা সেই পরিস্থিতিতে হারিয়ে ফেলে, যখন আমরা ওর প্রয়োগ করি না।একজন পৌঢ় বয়সের ব্যক্তি সর্বদা নিজের স্মৃতির ওপরে বিশ্বাস করতে ভয় পান। এখনকার আধুনিক যুগে বিভিন্ন ধরনের বই, ক্যালেন্ডার, এ্যাপয়েন্টমেন্ট ডায়রী, টেলিফোন, মনে রাখার চিরকুট, ডেস্ক নোটস্ ইত্যাদি জিনিস প্রচলিত আছে। এই সব কিছুই আমাদের স্মৃতির বোঝাকে হালকা করার জন্য হয় আর এজন্য এগুলো ভুল পথে কাজ করে। থোর্নডাইক নামক সুপ্রসিদ্ধ মনোবিজ্ঞানিক স্মৃতি আর বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন পরীক্ষার পেছনে নিজের প্রচুর সময় লাগিয়েছিল। উনি এটা দেখতে পেয়েছিলেন যে, আমাদের জীবনে শেষ ভাগকে বাদ দিয়ে, আমাদের বেড়ে চলা বয়সের মধ্যে কম হওয়ার কোন স্বাভাবিক কারণ থাকে না। যদি সময়ের আগেই আমাদের স্মৃতিশক্তি কমে আসে, তাহলে তার জন্য আমাদের নিজেদেরকেই দায়ী বলে মেনে নেওয়া উচিত। আমাদের স্বীকার করে নেওয়া উচিত যে, আমরা যখন নিজেদের স্কুল জীবনের শিক্ষা সম্পূর্ণ করে নিই… তখন আমরা কোন কিছু শেখার চিন্তা করি না। বাস্তবে শেখা বা মনে করাটা কোন কিছুপড়া নয়… যেটা কেবলমাত্র মেনে নেওয়ার ব্যাপার মত হয়। প্রৌঢ় বয়সে, অভনয় আর অভিনয়ের মত ব্যবসাগুলোকে বাদ দিলে প্রকৃতপক্ষে শেখার জন্য না তো প্রেরণা থাকে, না থাকে কোন উৎসাহ। এর ফলে উত্তম স্মৃতির টেকনিক কমে আসে। এই জিনিসটা লাগাতার ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে। তবুও এই জিনিস টা নির্ণায়ক রূপ ধারণ করবে না, যদি আমরা নিজেদের দৈনন্দিন, ব্যবসায়িক বা সামাজিক জীবনের সমস্ত ছোট-ছোট জিনিসকে মনে করে যে, নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর আর এ্যাপয়েন্টমেন্টকে মনে রাখাটা হচ্ছে সময় নষ্ট করা। এসব জিনিসকে খুব সহজেই নোট বুক বা ডায়রীতে লিখা যেতে পারে। কিছু লোক পায়ে হেটে ঘুরে বেড়ান, যখন ওনাদের জন্য গাড়ী বা বাসে করে ঘোরাটা অনেক সহজ নয়। তবুও এজন্য পায়ে হেটে ঘোরেন, কারণ পায়ে হটাটা স্বাস্থের জন্য ভাল হয়। ওনারা নিজেদের মাংসপেশীর শক্তিকে বাড়াতে চান, নয়তো কম পক্ষে ঠিক ততটাই ধরে রাখতে চান। অন্য দিকে, প্রতিটা ছোটখাট জিনিসকে ডায়রী বা নোট বুকে লিখে ওনারা নিজেদের স্মৃতিশক্তিকে দূর্বল করে তোলেন ।যদি ওনারা দীর্ঘ দিন পরে কোন ঘটনাকে মনে করার চেষ্টা করেন, তখন ওনারা সেটাকে মনে করতে পারেন না। পরিণামসরূপ ওনারা তখন নিজের স্মৃতির ওপরে আরও বেশী করে অবিশ্বাস করতে শুরু করেন।শেষে ওনারা নিজের স্মৃতিকে অসফল পেয়ে অস্থির হয়ে ওঠেন। ওনারা এটা অনুভব করতে পারেন যে, এই পরিস্থিতির জন্য ওনারা নিজেরাই দায়ী। এই সব মনোবিজ্ঞানিক কারণগুলো ছাড়াও এই তথ্যটি প্রকট করে তোলে যে, বেশী বয়সের ব্যক্তিরা প্রায়ই গত সপ্তাহ বা গত মাসে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোকে ভুলে যান, কিন্তু ৩০-৪০ বছর আগের ঘটা ফালতু ঘটনা ওনারা ঠিকই স্মরণ করে নেন ।